একা চাঁদ, তুমুল বৃষ্টি আর অভিমানী প্রেম

বৃষ্টি ও প্রেম (অক্টোবর ২০২২)

মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী
  • 0
  • ৬৮
প্রিয় রাহুল
আমি সেই নীলা। তোমার অপেক্ষায় দীর্ঘ আটটি বছর। জানি না পূর্বের ঠিকানায় তোমাকে পাবো কি না। তবুও বুকভরা আশ্বাস আর চোখভরা সমুদ্রজল নিয়ে তোমাকে লিখছি। দীর্ঘদিন যাবৎ লিখতে চেয়েও লেখা হয়ে উঠেনি। তোমার ছেলের আকুতি নিজেকে আর ঠেকিয়ে রাখতে পারিনি। মনে হয়েছিল একটা সমুদ্রের ঢেউ আমার চোখে ঘেঁষে পাড়ি দিচ্ছে সাগর- মহাসাগর। আর আমি যেন শত স্রোত নিয়ে বাঁধ ভাঙা পথে চলছি। শত প্রতিবন্ধকতা ভেঙে পাড়ি দিই অনন্তকালের জন্য। না মানে কোন সূত্র আর না মানে সামাজিক, পারিপার্শ্বিক কিংবা নিজস্ব কোন নিয়মনীতি। ভাবছি যে চেনা পথ অচেনার রূপসাগরে ঢেলে দিয়ে এসেছি সে পথে নিজেকে আর প্রবেশ করাবো না। তবুও যে আর পারছি না। তোমার বুকের মানিক বাবাকে ছাড়া আর কিছু চায় না। না চায় মায়ের হাতে খেতে আর না চায় বাবাকে ছাড়া স্কুলে যেতে। না দেয় আমাকে বাসায় থাকতে আর না দেয় অফিসে। অন্যান্য বাচ্চাদের বাবা বাসায় ফিরে আসে, তার বাবা কেন আসে না বোল্ড অক্ষরে অভিযোগ জমায় ডায়েরির পাতায়।
জানি না কতোটা ভালো আছো। তবে এতোটুকু বিশ্বাস আছে, প্রতিটা পুরুষ পাথুরে মন নিয়ে জন্মায়। তাঁদের দু'হাত ধারালো অস্ত্র আর বুক কঠিন পাথর। দিন থেকে সপ্তাহ-পক্ষ-মাস- বছর-যুগ তারা খুব ভালো থাকে।

দুই.
এই তো কয়েকটা দিন পর তোমার ছেলের আটটি বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। অপেক্ষায় দিনগুণে আর বাবাকে কাছে না পাওয়ার আর্তচিৎকার প্রতিদিন দেয়াল ফাটায়। প্রতিদিন বাবার মিস করা লেখাগুলো প্ল্যাকার্ডে তুলে বাহিরে বের হয়। না জানি কোনদিন তোমাকে পাওয়ার জন্য প্রতিটা রাস্তার মোড়ে প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে দেয়। কতবার মিথ্যে কথা বলেছিলাম, তোমার বাবা তোমাকে ছোট রেখে হারিয়ে গিয়েছিল, অনেকদূর চলে গিয়েছিল। আর কোনদিন ফিরে আসবেন না। কিঞ্চিৎ শুনতে চায় না। বেশ কতোগুলো ডায়েরি বাবার স্মরণে লিখে রেখেছে।
|| বাবা আমাকে কি তোমার একটুও মনে পড়ে না? সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা-রাত আমাকে কি একটুও খোঁজো না? কই, আমি তো দেখিনি কোন বাবা এতোটা নিষ্ঠুর হতে। তুমি কেন এতোটা নিষ্ঠুর? তুমি না আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছো! এতো অবহেলা করছো কেন, একবার ফিরে এসো বাবা। তোমাকে অনেক মিস করছি...||

বলো, ডায়েরি কি আর কারো বাবা হারানোর বিচ্ছেদ বোঝে? তবে মা সমস্ত অভিমান বোঝে, সমস্ত কষ্ট বোঝে; তবুও যেন নারীরা কষ্টের বুকে পাথর বেঁধে হাটতে পারে। হয় তো কোন কোন নারীর জন্ম হয় পাহাড়সম কষ্ট বুকে নিয়ে বেঁচে থাকতে। সেই নারীর মতোই নিজেকে সপে দিয়েছি। তবুও ইদানীং নিজেকে কোনভাবে আর ঠেকিয়ে রাখতে পারছি না। জনম জন্মান্তরের এই রীতিনীতি যেন প্রতিটা মুহূর্তে আমাকে ঘায়েল করে ফেলে রাহুল।

তিন.
পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্ট কি জানো রাহুল? স্বামী বেঁচে থাকা সত্যেও তার পাশে দাঁড়াতে না পারা। সমস্ত কষ্ট, অভিমান, দুঃখ তার সাথে ভাগাভাগি করতে না পারা। নিকাহ নামাতে এখনো একটি মেয়ের নাম জেগে আছে, মেয়েটির স্বামী আছে, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি সবাই আছে অথচ সে মেয়েটি আর সেখানে নেই। সে মেয়েটি আর সে স্বামীর ভালোবাসার মায়াজালে নেই। না পারি স্বামীর পরিচয় গোপন রাখতে আর না পারি শ্বশুর - শ্বাশুড়ির পরিচয় লুকিয়ে নিতে। আঁধো কি ভেবেছ রাহুল- জীবনের এমন একটা পর্যায় এসে তোমাকে ছাড়া আটটি বছর কাটিয়ে দেবো। বুকের ভিতর প্রতিদিন রক্তক্ষরণ হয়, প্রতিদিন বিষাদের ঢেউ উঠে, প্রতিদিন মেঘ-বৃষ্টি জমে। তুমুল যুদ্ধ হয়। তবুও সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন জাগে, ভালোবাসা জাগে, ইচ্ছে জাগে। এক একটা অনুভূতি দূর্বার গতিতে শুধু তোমাকে স্মরণ করে। তোমার কথা বুকে দাফন করে যৌবনের ইচ্ছা- অনুভূতি- আবেগ সমস্ত কিছু ত্যাগ করে দিয়েছি। রাহুল আমার জীবনে কত প্রেম এসেছিল, কত ভালোবাসা হুড়মুড় করে বুকে বাঁধার চেষ্টা করেছিল। তবে জানো রাহুল যৌবন একজনকেই দেওয়া যায়; আর সেই প্রেমিক, সে ভালোবাসার পাওয়ার অধিকার রাখে। জানো রাহুল নারী কোন ধন-সম্পদ চায় না, টাকা-পয়সা চায় না; শুধু স্বামীর বুকে মাথা রেখে সারাটা জীবন পাড়ি দিতে চায়। সুখে-অসুখে স্বামীকে নিজের কল্পনার সাথে বাস্তবতার মিল চায়৷ অথচ সব ছেড়ে আজ সন্তানকে বুকে জড়িয়ে এক পৃথিবী বিষাদ নিয়ে পাড়ি দিচ্ছি বহুদূর।

চার.
ছোটবেলা মাকে হারিয়েছি। অথচ বাবা কখনো মা হারানোর বেদনা বুঝতে দেয়নি রাহুল। নিজের খেয়ালে আদর, স্নেহ-মায়া-মমতা কিছু বাকি রাখেননি। নিজ হাতে মেয়েকে না খাইয়ে দিয়ে কোনদিন খাবার পেটে জুটাননি। অথচ বয়স হতে না হতেই, সংসার বুঝতে না বুঝতেই তুলে দেয় তোমার হাতে, তুলে দেয় তোমার মা-বাবার হাতে। হাড়িপাতিল নিয়ে খেলনা করার বয়সে আমাকে জড়াতে হলো সংসার নামক কঠিন অধ্যায়ে।
ষোড়শী বছরের সে মেয়েটা কতটায় সাংসারিক চেতনা বোঝে রাহুল? আমি কিছু বুঝিনি তবুও চেষ্টা করেছি সবার মুখ উজ্জ্বল রেখে চলতে। অথচ এ সাংসারিক জীবনে অল্প বয়সে নেমে আসছে সবচেয়ে অন্ধকারময় মুহূর্ত। হয় তো কারো কারো জন্য এটা ছোট একটা শব্দ মাত্র, কিন্তু আমার কাছে এটি আগুনের ভিতরে ফুলের জন্ম নেওয়ার মতো। আগুনের ভিতর যেমন সৃষ্টিকর্তার মহিমা ছাড়া কোনদিন ফুল ফুটানো সম্ভব নয়, ঠিক আমার কাছেও তেমন। বিশ্বাস করো রাহুল, সংসার চেতনা কঠিন কোনকিছু নয়। কঠিন হচ্ছে আমাকে সবার সাথে মেনে নেওয়া। আমাকে একজন পরিবার মনে করা। আমাকে অন্য সবার মতো দেখা। সময়ে অসময়ে একজন বন্ধুর মতো খোঁজ নেওয়া। কিন্তু রাহুল আমি পেয়েছি কি? আমাকে আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, আমি পেয়েছি কোথায়? বাবা তোমার হাতে তুলে দিয়ে গেল আর তুমি কি করলে আমাকে রেখে কোথায় যেন চলে গেলে। অথচ দিন যায় রাত হয় আর আমি পরিবারের কাছে হই ঘৃণিত একটা নারী মাত্র। স্বল্প বয়সে একটা মেয়ে থেকে নারী শব্দে আমি হই অবহেলিত। সময়ে অসময়ে আরো আঘাত, আরো কষ্ট আরো বেদনা বাড়তে লাগলো জীবনের এ দিগন্তে।

পাচ.
আজ বাবা পৃথিবীর বুক ছেড়ে চলে গেছেন। আকাশ পরিমাণ দুঃখ বুকের উপর চাপা দিল রাহুল। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে লাগলে। ছোটবেলা মা'কে হারিয়ে কখনো এতোটা দুঃখ অনুভব করিনি। সেদিন এতো করে চাইলাম। এতো করে বাবার কাছে গেলাম কেউ আমাকে সামান্য দাম দেয়নি। শুনায়নি তোমাকেও। আমাকে যেতে দেয়নি রাহুল। বলো এ দুঃখ কাকে বুঝায়? বলো-মৃত বাবাকে দেখা কি অপরাধ? মানুষ বেঁচে থাকলে তার প্রতি হাজারো অনুরাগ-বিরাগ থাকতে পারে, মরে যাওয়ার পরে তার প্রতি কষ্ট, রাগ জমিয়ে কি ফায়দা পাওয়া যায় রাহুল? আজ আমার বিবেকের জন্ম দিছে, সেখান থেকে বলতে পারি- আমার বাবা তো কারো সাথে অপরাধ করেননি। তাহলে কারো কষ্টের কারণ হবে কিভাবে? রাহুল জীবন একটা ভুল; এখানে ভুলের সঞ্চয় করতে করতে আখিরাতের জন্য আমরা কি বা নিতে পেরেছি? দুঃখগুলো শুধু আত্মগোপন করেছি কোনদিন প্রকাশ করিনি। অতঃপর যে পরিবার আমার সুখদুঃখের ভাগিদার হবে, সে পরিবারই এতোকিছুর পর আমার কাছে বিশাল অংকের যৌতুক দাবি করে। এই সব তোমার অজান্তে। তোমাকে কখনো বলার চেষ্টা করিনি। বলার ইচ্ছেও কখনো পোষণ করিনি। সবসময় হাসি-মুখে দিনরাত অতিবাহিত করতে চেয়েছিলাম। জগড়া বাঁধার চেষ্টা করিনি। মুখ নেড়ে কারো সামনে কথা বলারও অধিকার রাখিনি। তুমি সংসারের একমাত্র ছেলে৷ বলতে গেলেও তোমার পরিবারের সাথে তোমার জগড়া বাঁধতো কিংবা সাংসারিক চেতনায় স্ত্রীর দিকে টানতে গিয়ে পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার জন্যে চাইতে অথবা পরিবার রাগে তোমাকে আলাদা করে দিতো। অথচ আমি চেয়েছি ঘরের ছেলে ঘরেই থাকবে। আমি না হয় পরের ঘরের মেয়ে তোমার হয়ে এসেছি, না হয় ভীষণ কষ্ট বুকে জমিয়ে দূরে চলে যাবো৷ অবশেষে গভীর রাতের নীরবতার সাথে চলতে শুরু হলো। এরই মধ্যে যখন বিশাল অংকের টাকা দাবী করলো আর আমি দিতে পারছি না ঠিক তখনি মা তোমাকে দিয়ে আমাকে তালাক দেওয়ার জন্য কাগজপত্র রেডি করতে শুরু করেছিল। বাবা বারবার বারণ করেছিল, কিন্তু মা আর ছোট বোন কোনভাবে শুনতে চায়নি। বাড়ির সবাই অনুরোধ করেছিল, অথচ মা তাঁদের সাথেও জগড়া লাগিয়ে দিয়েছিল। সুখ কামাতে এসে অবশেষে দুঃখের ভার বহন করতে হল আমাকে।

ছয়.
উপন্যাসিক এ সাংসারিক চেতনায় আজ আমার সন্তান আমার পেটে আট মাস। একদিকে পেটের বেদনা অন্যদিকে সাংসারিক কষ্টগুলো আমাকে জ্বালাতে শুরু করেছিল রাহুল। বাবা যে ছেলেটির হাতে তুলে দিয়ে বলেছিল- সারাজীবন সুখেদুখে নীলাকে পাশে রাখিও। কখনো কষ্ট দিও না। অথচ সে মানুষটাকে আজ পাশে পাই না। সে মানুষটাই আজ যোজন-যোজন দূরে। কিন্তু বিশ্বাস করো রাহুল, তালাক শব্দটার এ ভীষণ ব্যথা সহ্য করতে না পেরে আটমাসের গর্ব নিয়ে পরিবারের একসমুদ্র কষ্ট বুকে ধারণ করে ছেড়ে চলে এসেছি অজানা পথে। সব লিখে বলা যায় না। অনেক কষ্ট ও পরিশ্রম সহ্য করে দূরন্ত স্বপ্ন বুনেছি। সন্তান একদিন মানুষ হবে৷ সেদিন না হয় সমস্ত কষ্ট আর অভিমান ভুলে সুখী হবো।

হয় তো তুমি ভেবেছিলে আমি আত্মহত্যার যে চিরকুট লিখে রেখে এসেছি, তাতেই আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছিলাম। আমি আত্মহত্যা করবো ঠিকে কিন্তু আমার পেটের সন্তান কি দোষ করলো, আমার জন্য তাকেও কেন মরতে হবে। আর আত্মহত্যা কোন সমাধান নয় রাহুল। যদি সমাধান হতো হাজারো বিবেকবান নারীপুরুষ আত্মহত্যার পথই একমাত্র বেঁচে নিতেন। এতোকিছুর পরেও তুমি কখনো আমাকে খুঁজে দেখোনি। আমাকে কোনভাবে মনেই রাখলে না। সস্তা ভেবে ফেলে দিয়েছিলে কাবিন নামার সমস্ত স্মৃতি। কিন্তু রাহুল কোনদিন ভেবে দেখোনি- সন্তান যখন গর্বে ছটফট করেছিল তখন মনে হয়েছিল হিমালয়ের উপর থেকে কেউ আমাকে ফেলে দিয়েছিল, অথচ ধরার মতো যে শক্তি ছিল সে ইচ্ছে করে আমাকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল। আমি তো একটা নারী রাহুল; যৌবনের ১ম পর্যায়ে একটা পুরুষ সব বোঝে কিন্তু একটা নারী সব বোঝে উঠতে পারে না। বোঝে উঠার বয়সে সে সন্তানের মা হয়ে যায়। তুমি যদি পাশে থাকতে তাহলে এতোটা কষ্ট নিয়ে আমাকে এতোদূর পাড়ি দিতো হতো না। আমি হারিয়ে গিয়েছি তুমি খোঁজে দেখোনি কোনদিন। অথচ তুমি যদি হারিয়ে যেতে আমি ঠিক এ খুঁজে নিতাম।

আমি এ মুহূর্তে আর লিখতে পারছি না রাহুল।সমুদ্রের সমস্ত ঢেউ যেন গড়িয়ে পড়ছে আমার শরীর দিয়ে আর আমি যেন গড়াগড়ি খাচ্ছি ডোর টু হেলের ভিতর। আমি না হয় অবহেলায় থাকি। না হয় আমাকে দূরে রেখো, খোঁজ নিও না। তবুও তোমার রাজপুত্রকে একটু বাবার পরিচয় দিও। দাদা-দাদীকে দেখার সুযোগ দিও। জীবনের প্রায়শ্চিত্তটা ছিল তোমার আর আমার, তোমার সন্তানের নয়। আশা করি, সন্তানের সে প্রত্যাশিত আহ্বানে তুমি সাড়া দিবে। তার আদুরে বাবা জন্মদিনের উৎসবে কেক কাটবে। একা চাঁদ, অভিমানী প্রেম আর তুমুল বৃষ্টি সাথে না হয় আজও আমি ভিজবো!

ইতি
তোমার অবহেলিত
নীলা
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মাইদুল সরকার সময়ের গল্পটা পড়তে ভাল লাগলো।
mdmasum mia দারুন লাগলো গল্পটা।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ষোড়শী বয়সী একটা মেয়ে খেলনার বয়সে যখন স্বামীর সংসারে আসে, মেয়ের বাবা যখন স্বামীর হাতে তাকে তুলে দেয় সারাজীবন সুখ-দুঃখ, হাসিকান্না, অভিমানে পাশে রাখতে অথচ দু'দিন পর যখন স্বামী সংসারে রেখে তাকে ছেড়ে চলে যায়, খোঁজ খবর আর না নেয় তখন পারিপার্শ্বিকতা তাকে যতোটা ভুগতে হয় তার বেশি ভুগতে হয় পরিবারের দেওয়া কষ্ট। উক্ত গল্পের নীলা ছিল রাহুলের স্ত্রী। গল্পের ধারাবাহিকতা থেকে স্পষ্ট আসে, আট বছর আগে রাহুলের সাথে নীলার বিয়ে হয়। ছোটবেলা নীলার মা মারা যায়। বিয়ের কয়েকমাস পরেই বাবা পৃথিবী ত্যাগ করেন। মায়ের শোক যেতে না যেতে খেলনার বয়সে বাবা তুলে দেয় রাহুলের হাতে। অথচ রাহুল রেখে যায় পরিবারের কাছে। আর পরিবার তাকে দিতে থাকে মানসিক যন্ত্রণা। ধীরেধীরে কঠিন থেকে কঠিনতম আঘাত। হাতে কিংবা ভাতে নয়, মুখের আঘাত এটমিক বোমার চেয়ে ভয়ংকর। বাবার মৃত খবর শোনেও বাবাকে দেখতে যেতে দেয়নি। এর পর পরই নীলা থেকে বিশাল অংকের টাকা দাবী করলে নীলা দিতে ব্যর্থতা প্রকাশ করে। আর তাতেই রাহুলের মা গোপন চুক্তিতে নীলার তালাকের ব্যবস্থা করে। তখন নীলা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার চিরকুট লিখে পালিয়ে যায়। অথচ নীলার গর্বে তখন আট মাসের সন্তান। দীর্ঘ আটটি বছর পর নীলার ছেলে যখন বাবাকে দেখার ইচ্ছা ডায়েরি লিখতে থাকে, চিৎকার করতে থাকে, প্ল্যাকার্ড উড়াতে থাকে; হয় তো বাবাকে খুঁজতে খুঁজতে রাস্তার প্রতিটা কোণে কোণে প্ল্যাকার্ড লাগাতে পারে কিংবা হারিয়ে যেতে পারে ঠিক তেমনটা ভেবে সন্তানের আটটি বছর পর সামনের জন্মতারিখ স্মরণ করে রাহুলকে সন্তানকে দেখার জন্য চিঠি লিখে। উক্ত গল্পে লেখক 'বৃষ্টি ও প্রেম' বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য তুলে ধরেছেন এভাবে- প্রেম হচ্ছে নীলাকে তার বাবা সারাজীবনের জন্য রাহুলের হাতে তুলে দেওয়া আর রাহুল তাকে রেখে দীর্ঘদিনের জন্য কোথাও গেলে নীলাকে সহ্য করতে হয় পরিবারের মানসিক যন্ত্রণা। নীলা মানসিক যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আত্মহত্যার কথা বলে আটমাসের সন্তান নিয়ে যখন আটটি বছর কত না কষ্ট আর দুঃখ নিয়ে বেঁচে আছেন সেটাকেই বৃষ্টি হিসেবে প্রমাণ করা যায়। কারণ বৃষ্টি সবার জীবনে আনন্দ কিংবা সুখ আনয়ন করে না, কারো কারো জীবনে নেমে আসে ভয়ংকর অন্ধকার। সুতরাং উক্ত দিক বিবেচনা করলে 'বৃষ্টি ও প্রেম' বিষয়ের শতভাগ সামঞ্জস্যতা রয়েছে।

২২ ডিসেম্বর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৬৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪